আজহারীর রাজনীতিতে নামার পূর্বাভাস! এখনই অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি

Daily Inqilab সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক

০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ পিএম

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর সম্প্রতি তাফসির মাহফিলে দেওয়া এক বক্তব্যকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকেও এনিয়ে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। এনিয়ে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা।

গণহত্যাকারী হাসিনা সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থাকা মিজানুর রহমান আজহারী সবসময় ইসলামের মধ্যমপন্থার সৌন্দর্য্যকে প্রমোট করা পছন্দ করেন বলে দাবি করেন। সেইসাথে বিশুদ্ধ ইসলামকে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এবং অত্যন্ত সাবলীলভাবে ও বোধগম্য ভাষায় সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে দলমত নির্বিশেষে দেশের ইসলামপ্রিয় বিশাল একদল মানুষের কাছে জনপ্রিয় দাঈ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। বিশেষত দেশের তরুণ সমাজের মাঝে তার আবেদন এখন তুঙ্গে।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারী একজন ইসলামী বক্তা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী-সমর্থক হিসেবে নয়। তাই তার উচিত হবে রাজনৈতিক বক্তব্য পরিহার করে কেবল বিশুদ্ধ দ্বীনের প্রচার-প্রসারেই সীমাবদ্ধ থাকা। অন্যথায় ইসলামপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করা হবে যা এক ধরনের ধোকার সামিল বলে মনে করেন তারা।

সচেতন মহলের একটি অংশ মনে করেন, কোনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকলে আজহারীর তা এখনই খোলাসা করা উচিত। দেশের আরেক জনপ্রিয় আলেম-দ্বীন মরহুম আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর মতো প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে মাহফিল করতে বাধা কোথায়- এমন মন্তব্য করতে দেখা গেছে কাউকে কাউকে।  

যশোরের মাহফিলের সেই মন্তব্যকে ঘিরে নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, আজহারীর বক্তব্য ইঙ্গিত বহন করে তিনি একটি দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি সেই দলটিকে প্রমোট করতেই মাহফিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদেরকে কৌশলে হেয়প্রতিপন্ন করছেন। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, আজহারী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে যুক্ত রয়েছেন। তাকে ব্যবহার করেই দলটি রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পরিচয় গোপন করে রাজনীতি করার ‘কৌশলের’ কড়া সমালোচনা করেছেন নেটাগরিকরা। ছাত্রশিবিরের পরিচয় গোপন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় এক ধরনের সমালোচনা আগে থেকেই চলে আসছে। সর্বশেষ পরিচয় গোপন রেখে মিজানুর রহমান আজহারীর মতো জনপ্রিয় বক্তাদেরকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের প্রচেষ্টার নিন্দা আরও তীব্রতর হচ্ছে।  

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে যশোরে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে কথা বলেন মিজানুর রহমান আজহারী। এসময় তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শুধু শাসকের হাত বদল হয়েছে, আমরা কিছু পাইনি। একদল খেয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। আমরা এরকম চাই না। আমরা চাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।
 

বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় এই তাফসিরকারক আরও বলেন, ‘ইসলাম দিয়ে আমাদের জীবন ও পরিবারকে সাজাতে হবে। কোরআন থেকে প্রেসক্রিপশন না নিলে জীবন সুন্দর হবে না, সমাজ ও রাষ্ট্র সুন্দর হবে না। কোরআনের প্রেসক্রিপশন অ্যাপ্লাই না করলে শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।

ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা শামসুজ্জামান দুদু সাম্প্রতিক এক আলোচনায় আজহারীকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইলে জামায়াতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি রাজনীতি করতে চান, স্বনামে করেন। প্রয়োজনে জামায়াতে যোগ দেন। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অন্যের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়।

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক এপ্রসঙ্গে বলেন, মিজানুর রহমান আজহারী টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াজ-মাহফিল করেন। কিন্তু টাকার বিনিময়ে একটি দলকে হেয় প্রতিপন্ন করবেন, একটি দলের পক্ষে সাফাই গাইবেন এটা দেশের মানুষ উনার কাছ থেকে আশা করে নাই।

এরআগে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে ২০২০ সালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এনিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন আজহারী।

ওই পোস্টে তিনি বলেন, আমি কোনো দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নই। আর কোনো রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আমার শিক্ষা জীবনও কাটেনি। মিথ্যাচার যেন এদেশে মহামারিতে রুপ নিয়েছে।নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এদেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়। আর সেটা হলো ‘জামাত শিবির’। এবার আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোন অথবা মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হোন। দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ভিন্নমতকে দমনের এই অপকৌশল পুরো জাতির ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

তিনি আরও বলেন, একজন দা’ঈ ইলাল্লাহর কোন দল নাই। তিনি সকল দলের, সকল মানুষের। তাদেরকে দলীয়করণ না করে ব্যাপক ভাবে দ্বীনের খেদমতের সুযোগ করে দেয়া উচিত। দেশের সব দলের মানুষ যেন তাদের দ্বারা আলোকিত হতে পারে সেটার পরিবেশ থাকা উচিত। ব্যক্তিগতভাবে, এদেশের রাজনীতিতে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। স্যোশাল এক্টিভিটি ও দা’ওয়াহ এক্টিভিটি এদুটি কাজই হল আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু।আমার মিশন হল এদেশে ইসলামের মধ্যমপন্থার সৌন্দর্য্যকে প্রমোট করা।

আজহারীর লাখ লাখ ভক্তও চান, তিনি কেবল দা’ঈ ইলাল্লাহ হিসেবেই তার ব্যক্ত করা সেই অবস্থানের ওপর অটল থাকুন। বিতর্ক এড়িয়ে দলমত নির্বিশেষে বৃহত্তর পরিসরে কেবল ইসলামের খেদমতে কাজ করে যাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর অক্টোবরে দেশে ফিরেন জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। জানা গেছে, ভারত সরকারের অদৃশ্য চাপে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আজহারীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।
এর আগে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার ঘোষণা দেন মিজানুর রহমান আজহারী। সে সময় এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে এখানেই এ বছরের তাফসির প্রোগামের ইতি টানতে হচ্ছে।

তবে তার দেশ ছাড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আজহারীর এক মাহফিলে ১২ ভারতীয় নাগরিকের ধর্মান্তরের একটি ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারত সরকারের অদৃশ্য চাপেই আজহারীকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে।ওই সময় পুলিশ ১২ জনকেই আটক করে এবং তাদেরকে ভারতে ফেরত পাঠায়।

 
 

বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া: বাংলা‌দে‌শি জাতীয়তাবা‌দের প্রতীক
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াত আমিরের একান্ত বৈঠক
বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া
বিমানবন্দরের পথে খালেদা জিয়া
আরও

আরও পড়ুন

ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

ব্যারিস্টার আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক

আরোহী যুবক নিহত

আরোহী যুবক নিহত

দেশীয় ফ্রিজ এসি-মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

দেশীয় ফ্রিজ এসি-মোটরসাইকেল শিল্পে কর বৃদ্ধি, বাড়তে পারে দাম

বাজারে চালের ঘাটতি নেই, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাজারে চালের ঘাটতি নেই, দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা

এবার অস্ট্রেলিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৩

এবার অস্ট্রেলিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, পাইলটসহ নিহত ৩

‘শয়তানও মনে হয় শেখ হাসিনার কাছে হার মানবে’

‘শয়তানও মনে হয় শেখ হাসিনার কাছে হার মানবে’

আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ , জানাল আবহাওয়া অফিস

আসছে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ , জানাল আবহাওয়া অফিস

ঘুষের মামলায় অধ্যক্ষ মুস্তাফিজ ও শিক্ষানুরাগী মান্নান কারাগারে

ঘুষের মামলায় অধ্যক্ষ মুস্তাফিজ ও শিক্ষানুরাগী মান্নান কারাগারে

আসামিরা বিদেশে, জামিন নিলো কারা?

আসামিরা বিদেশে, জামিন নিলো কারা?

আ'লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ত্যাগের নয় ভোগের বস্তু মনে করেছিল: আল্লামা মামুনুল হক

আ'লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ত্যাগের নয় ভোগের বস্তু মনে করেছিল: আল্লামা মামুনুল হক

কিশোরগঞ্জে হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ

কিশোরগঞ্জে হলুদ সরিষা ফুলে ভরা ফসলের মাঠ

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট

কানাডায় নিখোঁজ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

কানাডায় নিখোঁজ প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ

সংবাদ প্রকাশের পর বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ

অবতরণের পর বিমানে মিল ২ লাশ

অবতরণের পর বিমানে মিল ২ লাশ

গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে, সময়সীমাহীন ঘোষণা কাতারের

গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে, সময়সীমাহীন ঘোষণা কাতারের

বাহরাইনের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বাংলাদে‌শি দূতের সাক্ষাৎ

বাহরাইনের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বাংলাদে‌শি দূতের সাক্ষাৎ

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া: বাংলা‌দে‌শি জাতীয়তাবা‌দের প্রতীক

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া: বাংলা‌দে‌শি জাতীয়তাবা‌দের প্রতীক

৭০ বছর ধরে হাদিসের দরস দানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শায়খুল হাদিস আল্লামা মুকাদ্দাস আলীর ইন্তেকাল

৭০ বছর ধরে হাদিসের দরস দানের বিরল কৃতিত্বের অধিকারী শায়খুল হাদিস আল্লামা মুকাদ্দাস আলীর ইন্তেকাল

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত